বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতে এক শ কোটি ডলার বিনিয়োগে আগ্রহী বহুজাতিক কোম্পানি

0

সবশেষ খবর হলো আলোচিত ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালি’র চেয়ারম্যান শামিমা নাসরিন ও তাঁর স্বামী ওই কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল-কে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোহাম্মদ রাসেল বলেছেন ইভ্যালির ব্যাংক একাউন্টে বর্তমানে মাত্র ত্রিশ লাখ টাকা আছে। অর্থাৎ, পাওনাদারদের টাকা পরিশোধের সক্ষমতা আপাতত ওনাদের নেই। ইভ্যালির কর্ণধাররা এমন এক সময়ে গ্রেফতার হলেন যখন বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতে এক শ কোটি ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বহুজাতিক একটি কোম্পানী। এটিকে দেশের ইকমার্স খাতের জন্যে বিশাল সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন অভিজ্ঞজনেরা।

জানা গেছে, বাংলাদেশে ২০১৩ সালে ব্যবসা শুরু করা ই-কমার্স কোম্পানি চালডাল-এর ব্যাপক সাফল্যে এই আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।  এই ক’বছরে চালডাল সারাদেশে ২৭টি ওয়ার হাউজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গত অর্থ বছরে মোট ৪০ মিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশী টাকায় ৩৪০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে, যা প্রতি বছর প্রায় ১২০ শতাংশ হারে বাড়ছে।

বাংলাদেশের ইকমার্স খাতে এক শ কোটি ডলার বিনিয়োগে আগ্রহী বহুজাতিকর একটি সুত্র বলছে, ১৮ কোটি জনসংখ্যার এদেশে ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ ভীষণ উজ্জ্বল। কিন্তু এই বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এই সেক্টরে লাখলাখ মানুষের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হলে সবকিছুর আগে দরকার সঠিক পরিকল্পনা। এটা না করলে ই-কমার্সের নামে কিছু অসাধু লোক এমএলএম ব্যবসার মতো ফটকাব্জির জালে বিপুল সংখ্যক মানুষকে জিম্মি করে ফেলবে।

বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সুত্র বলছে, বাংলাদেশের এরই মাঝে ইভ্যালি, ধামাকা শপিং, আলিশা মার্ট ইত্যাদির মতো কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন ই-কমার্স নিয়ে কাজ করছে ঠিক তেমনিভাবে ই-অরেঞ্জ এর মতো প্রতারণা কোম্পানীও মানুষকে ঠকিয়ে শতশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আবার ইভ্যালি’র বিরুদ্ধে এরই মাঝে প্রতারণার অভিযোগের প্রেক্ষিতে এটির চেয়ারম্যান শামিমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল গ্রেফতারও হয়েছেন।

বাংলাদেশে যখন ই-কমার্স খাতে বিদেশী বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখা দিলো, ঠিক তখনই ইভ্যালি’র শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিদের গ্রেফতারের ঘটনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অভিজ্ঞজনেরা বলছেন, সবকিছুর আগে খতিয়ে দেখা দরকার ইভ্যালি আসলেই ই-কমার্স কোম্পানী নাকি একটা এমএলএম ধাঁচের ফটকাবাজি প্রতিষ্ঠান।

দেখা যাচ্ছে ইভ্যালি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে প্রতিশ্রুত পণ্য সরবরাহ করেনি মাসের-পর-মাস। অন্যদিকে ওরা এমন মূল্যে পণ্যের অফার হাঁকাচ্ছেন যা আসলেই ওই পণ্যের উৎপাদন খরচের চাইতেই অনেক কম। এক্ষেত্রে তাদের ব্যবসায়িক স্বচ্ছতা কিংবা সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  এই জটিলতার সমাধান ইভ্যালিকেই করতে হবে। কোনও বিদেশী প্রতিষ্ঠান জেনেশুনে একটা প্রশ্নবিদ্ধ কোম্পানীতে বিনিয়োগ করবেনা।

তারা বলছেন, ইভ্যালি’র পরিচালন পদ্ধতিতেই বিরাট সমস্যা আছে। মূলত এটি স্বামী-স্ত্রী’র কোম্পানি, যেখানে অধিকাংশ কর্মকর্তা হলেন ওদের আত্মীয়স্বজন। দ্বিতীয় সমস্যা হলো ইভ্যালি কখনোই পাওনা পরিশোধের ব্যাপারে আন্তরিক হয়নি। নানা অজুহাতে বহু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কোটিকোটি টাকা ঝুলিয়ে রেখে এর মালিকরা বিলাশী জীবন যাপন করেছেন। যে প্রতিষ্ঠান এখনও লাভের মুখই দেখলো না সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক কিভাবে আউডি কিংবা রেঞ্জ রোভারের মতো কোটি টাকা দামের গাড়ী হাঁকান? কিভাবে এটির চেয়ারম্যান এবং এমডি মাসে দশ লাখ টাকা বেতন নিচ্ছিলেন? তাহলে কি ওনাদের ওই বিলাশী গাড়ী ব্যবহারের পেছনে মূল কারণ লোকজনের কাছে ইভ্যালি-কে বড় এবং লাভজনক কোম্পানি হিসেবে  একটা মিথ্যে ইমেজ তৈরী করা? এটা হয়ে থাকলে বুঝতে হবে, ইভ্যালির পক্ষে আসলেই আর কখনো ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

আরেকটা বিষয় হলো, বলা হচ্ছে ইভ্যালি নাকি শতশত কোটি টাকা দেনাগ্রস্থ অথচ ওদের ব্যাংকে নাকি মাত্র ত্রিশ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগতেই পারে শতশত কোটি টাকা তাহলে গেলো কোথায়? ইভ্যালির বর্তমানে দেনার পরিমান তো হাজার কোটি টাকার বেশী।

২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ইভ্যালি যাত্রা শুরু করে। এর মাঝে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকেই চলছে কোভিড সঙ্কট। তাহলে ওরা স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যবসা করেছে এক বছরের কিছু বেশী সময় ধরে। কিন্তু ২০১৯ সালের শেষভাগ থেকেই শোনা যাচ্ছিলো ইভ্যালি যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যাবে টাকার অভাবে। তারমানে, কোভিড সঙ্কট শুরুর আগে থেকেই ইভ্যালি অর্থনীতিক সঙ্কটে। এক্ষেত্রে একটা লোকসানি কোম্পানি কিভাবে এতোটা সময় কার্যক্রম চালিয়ে গেলো। এর গ্রাহকরা কেনো আগেভাগেই নিজেদের অভিযোগ তুলে ধরলেন না।

সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে ইভ্যালির জন্যে আগামীতে আর কোন সুখবর নেই। এটা আসলেই দেউলিয়া হয়ে গেছে। এমন একটা দেউলিয়া কোম্পানীতে বহুজাতিক কোনও প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আসলেই কতোটা আগ্রহী হবে এটা প্রশ্ন সাপেক্ষ।

কিন্তু এমন কথা মানতে নারাজ ইভ্যালির অধিকাংশ গ্রাহক এমনকি এই প্রতিষ্ঠানের কাছে লাখলাখ টাকা পাবে এমন কিছু প্রতিষ্ঠান। তারা বলছেন, ইভ্যালির নামে মানুষের টাকা মেরে দিয়ে দেশ ছেড়ে পালানোর মানুষ মোহাম্মদ রাসেল নন। তিনি একজন ব্যবসায়ী। ইভ্যালির আগেও সফলভাবে ব্যবসা করেছেন। হয়তো ওনার কিছু পদ্ধতিগত ভুলের কারণেই ইভ্যালির আজকের এই সঙ্কট। কিন্তু এটা কাটিয়ে ওঠার মতো মানসিকতা ইভ্যালির কর্ণধারের আছে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগছে, অকল্পনীয় কিংবা অসম্ভব কম মূল্যে পণ্য সরবরাহের অফার থেকে কি ইভ্যালি তাহলে সরে এসে নিজেদের প্রকৃত ই-কমার্স কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে? চালডালের মতো সাফল্য অর্জনে কি সক্ষম হবে ইভ্যালি?

এদিকে কিছু কথিত ই-কমার্স কোম্পানী ব্যবসার নামে মানুষকে প্রতারিত করে কোটিকোটি টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে । তেমনই একটা কোম্পানীর নাম ম্যাক্স। ঢাকার নিকেতন এলাকায় অফিস নিয়ে মাত্র কয়েক মাস ব্যবসার নামে বিপুল সংখ্যক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে প্রতারিত করে ওই কোম্পানীর মালিক শরিফুল ইসলাম ওরফে শাহরিয়ার এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছেনা। এই প্রতারককে অবিলম্বে গ্রেফতার করা দরকার।

পত্রিকার রিপোর্টে জানা গেছে, শরিফুল ইসলাম ওরফে শাহরিয়ার নামের এক প্রতারক ২০২০ সালে ম্যাক্স নামের একটা ভুঁইফোড় কোম্পানি খুলে বসে ঢাকার নিকেতন এলাকায় অফিস নিয়ে। মাত্র এক বছরের মধ্যেই সে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটিকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এখন পালয়ে বেড়াচ্ছে।

প্রতারিতদের একজন বলেন, এধরনের প্রতারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। আমরা এবিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here