জঙ্গীবাদের পথে হাঁটছে হেফাজতে ইসলাম

0

আজ থেকে ঠিক আট বছর আগে খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবী তোলে হাটহাজারী মাদ্রাসা কেন্দ্রীক হেফাজতে ইসলাম যখন আত্মপ্রকাশ করে, তখন অনেকেই ভুল করে এটিকে মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকদের অরাজনৈতিক সংগঠন ভেবে ভুল করেছিলেন। অনেকেই হয়তো তখন হেফাজতের ১৩ দফা দাবিগুলো ভালো করে পড়েও দেখেননি। যদি পড়তেন তাহলেই বুঝতে পারতেন কতোটা ভয়ঙ্কর এদের মিশন।​​

পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের জিজ্ঞাসাবাদে হেফাজতের “কীর্তিমান” নেতা মামুনুল হক অনেক কথাই বলছেন – অনেক তথ্য দিচ্ছেন। এরই মাঝে আমরা জেনে গেছি, মামুনুল হককে কিভাবে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করে বাংলাদেশকে আরেকটা আফগানিস্তান বানাতে। মামুনুল এটাও স্বীকার করেছেন, তাঁর এবং হেফাজতের অপকর্মের পেছনে পাকিস্তান, কাতার এবং দুবাই’র কোটিকোটি টাকা খাটানোর বিষয়টা। তিনি এটাও বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনী মেজর ডালিমের সাথে তাঁর প্রথম স্ত্রী আমিনা তৈয়বা’র বাবার আত্মীয়তা আছে। অর্থাৎ, মামুনুলের অপকর্মের পেছনে মেজর ডালিমদের হাত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।

এখানে একটা কথা উল্লেখ না করলেই নয়। কয়েক সপ্তাহ আগেই, মামুনুল যখন শহিদুলের স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণাসহ নারায়ণগঞ্জের বিলাসবহুল রিসোর্টে যৌণ অভিসারের সময় স্থানীয়দের হাতে ধরা খান, তখন ব্লিটজ পত্রিকাতেই আমাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো, আমিনা তৈয়বা’র পরিবারের সদস্যেদের সবাই জামাত ঘরানার। আমরাই প্রথম বলেছিলাম, মামুনুল এবং হেফাজতের অপকর্মের পেছনে পাকিস্তানী আইএসআই-এর সংশ্লিষ্টতা আছে। শেষতক আমাদের কথা প্রমাণিত হলো।

গত কয়েক বছর থেকেই ব্লিটজ বলে আসছে, হেফাজতে ইসলাম আসলে একটা বিষধর সাপ। সুযোগ পেলেই ছোবল দেবে। এতোকাল আমাদের কথা কেউ আমলেই নেননি।

একটা কথা এখানে না বললেই নয়। সারা বিশ্বের শীর্ষ নীতিনির্ধারক এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধীদের কাছে ব্লিটজ ব্যাপকভাবে সমাদৃত। কারণ, জঙ্গীবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আমাদের গবেষণাগুলো বিশ্বের সবগুলো কাউন্টার টেরোরিজম সংস্থার কাছে অমূল্য দলিল।

আমরা শুধু হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধেই সোচ্চার নই, এই অঞ্চলে যে ক’টি জঙ্গী সংগঠন আছে, সবগুলোর ব্যাপারেই আমরা সচেতন এবং আমাদের টিম এগুলোর ওপর ক্রমাগত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।

জঙ্গীবাদের পথে হেফাজতে ইসলাম

সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকবৃন্দ লক্ষ্য করছেন কিনা জানিনা, এরই মাঝে মামুনুল হক-সহ হেফাজতের সন্দেহভাজন নেতাদের গ্রেফতার অভিযানের সুযোগে পাকিস্তানপন্থী হেফাজত নেতা, যিনি আসলে এই সংগঠনকে ক্রমাগত জঙ্গীবাদের পথে ধাবিত করানোর অন্যতম নাটের গুরু, দেই জুনায়েদ বাবুনগরী নীরবে হেফাজতে ইসলামকে পুরোপুরি কুক্ষিগত করে এটিকে আপাতত বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে পরিচালিত করার পাশাপাশি ইসলামিক স্টেট, তালেবান, হিজবুল মুজাহিদীন এবং লস্কর-এ-তৌয়বা’র সহযোগীতায় একটি আঞ্চলিক জঙ্গী গোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তোলার পথে হাঁটছেন। এখানে উল্লেখ্য, পাকিস্তানে দীর্ঘ বহু বছর অবস্থান এবং লেখাপড়া করার সুবাদে বাবুনগরীর সাথে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা এবং পাক-আফগান জঙ্গী গোষ্ঠীর সাথে ঘনিষ্ঠতা আছে। বাবুনগরী এরই মাঝে তাবলীগ জামায়াতের ছদ্মাবরণে বেশ কিছু মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্রকে পাকিস্তানে কমান্ডো প্রশিক্ষণের জন্যে পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। এটা মামুনুল হকেরও অজানা নয়। প্রশ্ন উঠতেই পারে, মাদ্রাসা শিক্ষক এবং ছাত্রদের কমান্ডো প্রশিক্ষণের প্রয়োজনটা কি। এটা যে আগামীতে বাংলাদেশে হেফাজতের নেতৃত্বে জঙ্গীবাদ বিস্তারের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই করা হচ্ছে এটা বোঝার জন্যে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন আছে কি?

হেফাজত গত ৩-৪ বছর থেকেই ক্রমশ রাজনৈতিক দলের নেতাদের নেতৃত্বে এনে এটিকে জঙ্গী শক্তি সম্বলিত এক চরম প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলে রূপ দেয়ারই অংশ। আমার মনে হয়, ২০২৩ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখেই হেফাজত এদের কাজকর্ম গোছাচ্ছিলো। এদের টার্গেট ছিলো ২০২৩ সালে সরাসরি ক্ষমতায় না যেতে পারলেও কিং মেকার পার্টি হিসেবে আবির্ভূত হওয়া। এক্ষেত্রে ২০২৩ সালে ওদের রাজনৈতিক অভিলাষ পূর্ণ না হলে হেফাজত সরাসরি জঙ্গীবাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে চরম অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতো।

জুনায়েদ বাবুনগরীর কবল থেকে হেফাজতে ইসলামকে মুক্ত না করতে পারলে আগামী দিনের দানব হেফাজত থেকে নিস্তার পাওয়া অসম্ভব। মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকদের সংগঠন হিসেবেও হেফাজতের অস্তিত্ব থাকা ভীষণ ঝুঁকিপূর্ন। কারণ, এরা অরাজনৈতিক সংগঠনের খোলসে রাজনৈতিক এবং জঙ্গী সংগঠনে পরিণত হওয়ার পথেই হাঁটছে। এক্ষেত্রে হেফাজত সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা দরকার। মাদ্রাসা শিক্ষক এবং ছাত্রদের আবার সংগঠনের কী প্রয়োজন?

তারপরও আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকরা যদি মনে করেন, অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে হেফাজতে ইসলাম টিকে থাক, তাহলে ওই সংগঠনের নেতৃত্বে পুরোপুরি পরিবর্তন আনতে হবে। পাল্টে দিতে হবে এর খোলনলচে। মাদ্রাসা শিক্ষক এবং ছাত্রদের মধ্যে যারা প্রকৃত অর্থে মডারেট, এবং যাদের মগজে জঙ্গীবাদ কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার মতলব নেই, তাদের হাতেই দিতে হবে এই সংগঠনের নেতৃত্ব।

আরেকটা জরুরী বিষয়। হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা শাহ্ আহমেদ শফী সাহেবের রহস্যজনক মৃত্যুর জন্যে হেফাজতের যেসমস্ত নেতারা দায়ী, তাদের সবার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যাবস্থা নেয়াটা উচিৎ। আমি যদিও কখনোই হেফাজত কিংবা আহমেদ শফি সাহেবের কোনো কাজকেই সমর্থন করিনা, তবু আমার মনে হয়, ওই মুরুব্বী ব্যক্তিটির অমানবিক মৃত্যুর ঘটনার বিচার হওয়া দরকার। শুনেছি এরই মাঝে পুলিশের একটি এলিট বিভাগ এবিষয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছে। ওই রিপোর্টার ভিক্তিতেই দোষীদের সনাক্ত করা সম্ভব।

সবশেষে একটা কথা। হেফাজতের উগ্রপন্থী এবং পাকিস্তান প্রেমীদের বিরুদ্ধে যখন আইনী ব্যবস্থা চলছে, ঠিক তখনই ইউটিউব এবং সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে হেফাজত, বিএনপি এবং জামাতের কিছু লোক সরকারের এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে ক্রমাগত অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। দেশে অরাজকতা সৃষ্টির উস্কানী দিচ্ছে ওরা। এদের কারো-কারো সম্পর্কে আমি নিজে এবং আমাদের পত্রিকার পক্ষ থেকে পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অকাট্য প্রমাণসহ অভিযোগ করা সত্বেও কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। অথচ এই দুর্বৃত্ত অপপ্রচারকারীদের সংঘবদ্ধ অপপ্রচারের ফলে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আমি আশা করবো, বিষয়টাকে খাটো কিংবা তুচ্ছজ্ঞান করে দেখার বদলে সংশ্লিষ্টরা এক্ষুনি ব্যবস্থা নেবেন।

  • সালাহ্ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী

​Please follow Blitz on Google News Channel

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here