গণতন্ত্র-বিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নাশকতা কর্মকাণ্ডে অর্থের জোগানদাতাদের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবিদের সংখ্যা অনুযায়ী ৩১৩ জনের অর্থদাতা দল তৈরি করে সংগঠনটি। দাতাদের অনেকেই হেফাজতের গোপন উদ্দেশ্য সম্পর্কে না জেনেই অর্থ দিয়ে আসছেন। আবার অনেকেই তাদের আসল উদ্দেশ্য জেনেই সহায়তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এসব অর্থদাতার বিস্তারিত পরিচয় এবং অর্থের উৎস খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান তাঁর বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘কারা ফিন্যান্স করে সেগুলো নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। কিছু কিছু উপাদান পাচ্ছি। আরো কিছুদিন তদন্তের পর এ বিষয়ে অ্যানাউন্স করব।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের অর্থের জোগানদাতা আছেন ৩১৩ জন—আমরা এমন তথ্য পেয়েছি। এখন এই অর্থদাতাদের পরিচয় শনাক্ত করে তাঁদের অর্থের উৎস খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামুনুল হকসহ কিছু নেতার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অনেক টাকার লেনদেন পাওয়া গেছে।’
ডিবি সূত্র জানায়, হেফাজত নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবিদের সংখ্যার হিসাবে ৩১৩ জন ডোনার বা অর্থদাতা তৈরি করা হয়েছে। ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে দান করা পুণ্য এমন বক্তব্য দিয়ে তাঁদের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহী করা হয়। দেশের বাইরেও বেশ কয়েকজন অর্থদাতা আছেন। তাঁদের দেওয়া টাকায় হেফাজত রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র, নাশকতা বা অন্য কোনো কাজে ব্যয় করছে এসব বিষয় নিয়ে অর্থদাতাদের অনেকের মাথা ব্যথা নেই। আবার কেউ কেউ পরিকল্পনার ব্যাপারে জানেন। তাঁদের অনেকে হেফাজতের সক্রিয় কর্মী।
বুধবার পর্যন্ত কয়েকজন অর্থদাতার নামের তালিকা করেছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে। সূত্র মতে, রিমান্ডে থাকা মামুনুলসহ নেতারা কর্মসূচির ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিচ্ছেন। তাঁদের তথ্যগুলো মিলিয়ে বক্তব্য যাচাই করা হচ্ছে।
পাশাপাশি জব্দ করা মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষায় যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে গতকাল ডিবি পুলিশ হেফাজতে ইসলামের আরো দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের নিয়ে ঢাকায় গ্রেপ্তারকৃত নেতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ জনে।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার আরো বলেন, ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলে কারা বক্তব্য দেবেন, তা নির্ধারণ করতে হেফাজতের কয়েকজন নেতা মিলে একটি বোর্ড গঠন করেছেন। এই বোর্ডের উপদেষ্টা হলেন মাওলানা মামুনুল হক। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল জানিয়েছেন, ওয়াজ মাহফিলে কারা বক্তব্য দেবেন তা ওই বোর্ডের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। মামুনুল ওই বোর্ডের উদেষ্টা হিসেবে বক্তাদের তালিকায় একেকটি মাহফিলের জন্য এক বা একাধি বক্তা নির্ধারণ করে দিতেন, যাঁদের কাজ ছিল উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা।
ডিবি সূত্র জানায়, আর্থিক বিষয় অনুসন্ধানে কিছু তথ্য পাওয়া গেলে নাশকতার কাজে অর্থসংস্থানের অভিযোগে কয়েকজনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হতে পারে। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করবে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
হেফাজতে ইসলামের সাইবার জিহাদ ইউনিট
গত কয়েক মাস ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় এবং ইউটিউবে হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকসহ সরকার বিরোধী অপশক্তি নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। জানা গেছে, কওমি মাদ্রাসার কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের সমন্বয়ে হেফাজতের সাইবার জিহাদ ইউনিট গড়ে উঠেছে। এটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন জুনায়েদ বাবুনগরীসহ হেফাজতের কিছু উগ্রপন্থী নেতা। পাশাপাশি, হেফাজতপন্থী কিংবা আওয়ামীলীগ বিরোধী কিছু ব্যক্তিও এসব অপপ্রচারের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে জানা যায়।
মুদ্রা পাচারকারী এবং সন্ত্রাস বিনিয়োগকারী এক নারী
ঢাকা শহরের উত্তরা এলাকায় বসবাসকারী এক নারীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কাজে অর্থসংস্থানের অভিযোগের পাশাপাশি মালয়েশিয়ায় বিপুল অংকের অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে পত্রপত্রিকায় একাধিক রিপোর্ট প্রকাশের পর বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এরই মাঝের ওই নারীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিজোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। জানা গেছে, চলমান লক ডাউনের পর এবিষয়ে সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ওই নারীর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হতে পারে।
আগুন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান
আগুন সন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোনো আলেম ওলামাদের তো নয়ই, এমনকি বিএনপির কোনো নেতাদেরও গ্রেফতার করেনি সরকার। যারা আগুন সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, তাদের ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভিডিও দেখে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অপরাধীদের গ্রেফতার করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে কল্পকাহিনী তৈরির কোনো সুযোগ নেই। ঢাকা, হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্য দিবালোকে যেভাবে নারকীয় তাণ্ডব চালানো হয়েছে, তা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর, তথাকথিত ৭ নভেম্বর এবং ২১ আগস্ট ঘটিয়ে চক্রান্তের পথে ক্ষমতায় যাওয়ার দিন শেষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষমতায় যেতে হলে নির্বাচনের বিকল্প নেই, তাই আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে ২০১৩ সালে বিএনপি-জামাতের আগুন সন্ত্রাসে জড়িত ছাত্রদলের এক ক্যাডারের বিরুদ্ধে এরই মাঝে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। জানা গেছে, ২০১৩ সালে বিএনপি-জামাতের আগুন সন্ত্রাসে সক্রিয় অংশগ্রহনের পর ছাত্রদলের ওই ক্যাডার গ্রেফতার এড়াতে গোপনে বিদেশে পালিয়ে যায়।