দেশের শীর্ষ বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের নাম চ্যানেল আই। আরো বড় কথা হলো এটির অন্যতম মালিক ফরিদুর রেজা সাগর খ্যাতিমান লেখিকা রাবেয়া খাতুন-এর সন্তান। ফরিদুর রেজা সাগর নিজেও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের টেলিভিশন সেক্টরে প্যাকেজ নাটকের প্রবক্তা ইমপ্রেস টেলিফিল্মস। এটি চ্যানেল আই’র মালিক প্রতিষ্ঠান। আজ থেকে প্রায় চার যুগ আগেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে চাঙ্ক ভাড়া নিয়ে নাটক প্রচার করতে শুরু করে ইমপ্রেস। এরই সুবাদে সাগর পত্নী কনা রেজা এবং সাইখ সিরাজ পত্নী শাহানা সিরাজ নামদুটো বাংলাদেশের টেলিভিশন দর্শকদের কাছে অতি পরিচিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাটকে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আসে ইমপ্রেস টেলিফিল্মস।
১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করে চ্যানেল আই। সংখ্যাগত দিক থেকে এটা দেশের বেসরকারী মালিকানায় চতুর্থ চ্যানেল। এদেশের প্রথম বেসরকারী টিভি চ্যানেলের নাম এ-২১ টিভি। এটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। তথনও ভারতীয় চ্যানেল এটিএন এ এক ঘন্টার চাঙ্ক ভাড়া করে বাংলা নাটক চালাতো মাল্টিমিডিয়া প্রডাকশন্স। ভারতীয় এটিএন চ্যানেলের মালিক ছিলেন সিদ্ধার্থ শ্রীবাস্তব। এরা থাইল্যান্ডের থাইকম-৩ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতো। ভারতীয় এটিএন চ্যানেলের বাংলা চাঙ্কে মূল বিজ্ঞাপন ছিলো নাসির বিড়ি এবং নাসির সিগারেটের। সেসময় ওই বিজ্ঞাপনগুলোর দৃষ্টিকটু উপস্থাপন নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলতেন। তবু ওই একটা বিজ্ঞাপনের আয় থেকেই এটিএন চ্যানেলের বাংলা চাঙ্কটা চলতো।
পরবর্তীতে সম্ভবত ১৯৯৯ সালে ভারতীয় এটিএন চ্যানেল এর চাঙ্ক বাদ দিয়ে শিল্পোদ্যোক্তা মাহফুজুর রহমান নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন এটিএন-বাংলা। এটিএন-বাংলা চ্যানেলে সাপ্তাহিক ইসলামিক অনুষ্ঠান নিয়ে আসেন জামাতে ইসলামীর নেতা আরকানুল্লাহ হারুনী। এছাড়া ওই অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন বর্তমানে ফেরারী যুদ্ধাপরাধী মওলানা আবুল কালাম আজাদ। এটিএন-বাংলা চ্যানেলের ইসলামিক অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত আরো কিছু ব্যক্তি বর্তমানে বিদেশে পলায়নরত থেকে ইউটিউবে সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
এর আগেই সাজ্জাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে টোটাল এন্টারটেইনমেন্ট নেটওয়ার্ক বা টেন নামের চালু না হওয়া চ্যানেলটি কিনে নেন বিএনপি’র সেসময়ের প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব মোসাদ্দেক আলী ফালু। চ্যানেলটি কিনে নেওয়ার পর তিনি টেন চ্যানেলের নাম পাল্টে এটির নাম রাখেন এনটিভি। টেন টিভির মালিক সাজ্জাদ হোসেনের আরেকটা পরিচয় হলো তিনি বাংলাদেশের প্রথম পেজার সার্ভিস চালু করেন।
শুরু থেকেই চ্যানেল-আই তাদের অনুষ্ঠান নির্মাণে যথেষ্ট মনোযোগী ও যত্নশীল ছিলো। ওই চ্যানেলের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো সংবাদ, যা অনেক চ্যানেলের পক্ষেই তখন এটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের সম্প্রচার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে দেশের প্রথম বেসরকারী টেরিস্ট্রিয়াল টিভি চ্যানেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে একুশে টিভি। এটাই একমাত্র বেসরকারী চ্যানেল যেটি ডিস এন্টিনা ছাড়াই বাংলাদেশ টেলিভিশনের মতো দেশের সব প্রান্ত থেকে দেখা যেতো। এদেরই একটা বেসরকারী এফএম রেডিও ষ্টেশনও ছিলো যেটি চলতো বাংলাদেশ বেতারের যান্ত্রিক সুবিধায়।
বাংলাদেশে যেকোনো বিশেষ দিন কিংবা উৎসবে চ্যানেল আই’র অনুষ্ঠান আয়োজন অন্যসব চ্যানেলের চেয়ে একেবারেই আলাদা ধাঁচের ছিলো অনেক বছর। কিন্তু ক্রমশ এদের অনুষ্ঠানের মান নামতে শুরু করেছে। কমে যাচ্ছে দর্শকও।
এবারের ঈদে চ্যানেল আই’র নাটক আয়োজন নিয়ে এরই মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক ট্রল। কারণ, চ্যানেল আই ঈদে নিজেদের নাটক হিসেবে অনেকগুলো নাটক চালাচ্ছেন নাম বদল করে, যেগুলো এরই মাঝে ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে। যেমন, ইউটিউব চ্যানেলের নাটক ‘BLOOD’ এর নাম পাল্টে রাখা হয়েছে রক্তের ঋণ। এটিতে অপূর্ব অভিনয় করেছেন। দ্যা রেস নাটকের নাম পাল্টে রাখা হয়েছে মারচক্কর। মিশু সাব্বির অবিভিত একটা নাটকের নাম পাল্টে করা হয়েছে টালটি বালটি। এরকম ইউটিউব চ্যানেলে চলা আরো অনেকগুলো নাটকই চ্যানেল আই-তে নাম পাল্টে এই ঈদে প্রচার করবে চ্যানেল আই। এক্ষেত্রে দোষটা অবশ্যই চ্যানেল আই’র অনুষ্ঠান বিভাগের। ওরা কেনো এম কান্ড ঘটিয়ে চ্যানেল আই’র সুনাম নষ্ট করলেন এটা জানতে চাওয়ার অধিকার চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষের আছে। কিন্তু তাঁরা এসব নিয়ে কিছু বলবেন কিনা তা আমাদের জানা নেই।