দিগম্বর মনের উদ্ভ্রান্ত ভাবনা আর অপহৃত একরাশ প্রত্যাশা

0

আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দরদী উদ্যোগের কারণে আজ বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্ববাসীর কাছে এক ঈর্ষণীয় এবং অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দয়া করে চলচ্চিত্র এবং বাংলা নাটকের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বার্থে এই সেক্টরগুলোর জন্যে যৎসামান্য সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে আমাদের চলচ্চিত্র এবং নাটক সেক্টর। সালাহ্ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী

টানা ছয় বছর কারাগারে ছিলাম। এর সিংহভাগই কনডেম সেল বা ফাঁসির সেলে। ধর্মদ্রোহ আর রাষ্ট্রদ্রোহের বানোয়াট অভিযোগে। এসব তুঘলকি অভিযোগ এনেছিলো ২০০৩ সালে, জামাত নিয়ন্ত্রিত সরকার। ওদের ক্ষোভের কারণ, আমি লিখেছিলাম মাদ্রাসাগুলো জঙ্গী তৈরীর কারখানা হয়ে উঠেছে। এতোকাল পর আমার কথাগুলোই সত্যি হলো। তবু আমায় কারাগারে কাটাতে হয়েছে মূল্যবান ছয়টি বছর। ঠিক যেনো সক্রেটিসের অবস্থা। তখন আমার বলতে ইচ্ছে করেছে, “আমি জানি, ওরা কি জানেনা। ওরা জানে​​না, ওরা কি জানেনা”। এর আগে পৃথিবীর আর কোনো দেশে একজন লেখক এবং সাংবাদিককে শুধুমাত্র লেখালেখির ‘অপরাধে’ এতো কঠিন সাজা ভোগ করতে হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।

ফাঁসির সেলের অন্য ২৯ টা কামরার বাসিন্দারা যখন জীবনের শেষ মুহূর্তের অপেক্ষায় তটস্থ, তখন আমার মনের গহীনে চলছে কল্পনার রঙ্গীন বুনন, রাতদিন। আমার মনটা সবসময়ই উন্মুক্ত। দিগম্বরও বলা চলে। ওই মন তখন শুধু গান, কবিতা কিংবা গল্প লিখেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, আমি তখন স্বপ্নের ঢাউস ক্যানভাসে এঁকে চলেছি বিশাল প্রত্যাশার এক প্রস্থ ছবি।

কাকতালীয়ভাবেই হোক কিংবা স্বাভাবিক কারণে, বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলটা আমার হাতে গড়া। এসব কথা ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ, নাঈমুল ইসলাম খান ভাইদের জানা। আমার আব্বা চলচ্চিত্র প্রযোজক ছিলেন। আমার প্রপিতামহ ছিলেন কবি। এসব কারণেই হয়তো আমার অস্তিত্বের সাথে মিডিয়া মিলেমিশে একাকার।

সাংবাদিক কিংবা সম্পাদক হিসেবে কতোটা খ্যাতি কিংবা অখ্যাতি অর্জন করতে পেরেছি এসব নিয়ে আমার খুব একটা মাথাব্যথা নেই। গীতিকার কিংবা সুরকার হিসেবে এরই মাঝে কয়েক হাজার গাব জমা হয়েছে আমার ঝুলিতে, কয়েক শ প্রকাশিতও হয়েছে। তবু নিজেকে গীতিকার কিংবা সুরকার ভাবতে ভয় হয়। বরং আমি সঙ্গীতের এক অতি ক্ষুদ্র আরাধক। এটাই আমার পরিতৃপ্তি। এর বেশী প্রত্যাশা করার দুঃসাহস নেই আমার।

ফাঁসির সেলে বসেও আমি বাংলাদেশের মিডিয়ার কথা ভেবেছি। এসব খবর আমার কাছেধারের অনেকেই জানে। কেউকেউ তখন ভেবেছে, ওসব আমার নেহায়েত দিবাস্বপ্ন। হাসাহাসি কিংবা ঠাট্টা মশকরাও করেছে হয়তো কেউকেউ। কিন্তু আমার আপনজনদের সীমানায় যাদের অবস্থান, ওরা সবাই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতো, হিমালয় সমান বাঁধা কিংবা বিপত্তির মাঝেও স্বপ্ন দেখার স্পর্ধা এই শোয়েব চৌধুরীর চিরকালই আছে। ওরা বিশ্বাস করতো, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার কোনো চেষ্টাই আমি বাদ দেবোনা।

২০১৮ সালে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহের মাঝেই মনের গহীনে মিডিয়া নিয়ে যে স্বপ্ন সেটার বাস্তবায়নে অস্থির হয়ে উঠলাম। আমার কাফেলায় তখন মাত্র দুজন সহযোদ্ধা। তাজুল ইসলাম আর ফরিদুল আলম। আরেকজন ছিলো। রাকিব আহমেদ। করোনা তাকে হুট করে গতবছর কেড়ে নিয়েছে। আমার যেকোনো উদ্যোগে রাকিব অগ্র সৈনিকের মতো ঝাঁপিয়ে পড়তো বিনা তর্কে।

২০০৬ সালে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ক্রাউন মিউজিক গড়েছিলাম। গান নামের অ-গানে গা ভাসায়নি বলেই এটা এখনও খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে হাঁটছে। ২০২০ সালে গড়ে ওঠা ক্রাউন এন্টারটেইনমেন্ট, ক্রাউন ক্রিয়েশনস্ কিংবা ইউটিউব চ্যানেল ক্রাউন প্লাস কতোটুকু সফল কিংবা ব্যর্থ সেটা আমি বলবো না। এটা বলবেন মিডিয়া জগতের বাসিন্দারা। কিন্তু এরই মাঝে অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে। লোভী কিছু শকুনের নখের আঁচড়ে রক্তাক্তও হয়েছে আমাদের প্রচেষ্টা। তবু কাফেলা থেমে থাকেনি। স্রষ্টার অনুগ্রহে থামবেও না কখনো। তারপরও মনে কষ্ট আছে। আগেই বলেছি, আমি চিত্র প্রযোজকের সন্তান। একারণেই আমার স্বপ্নের বড় একটা অংশজুড়ে সিনেমা। কিন্তু বর্তমানে চলচ্চিত্রের যে অবস্থা, তাতে মনে হচ্ছে, আমার ওই স্বপ্নটা বুঝি এরই মাঝে অপহৃত হয়ে গেছে। তারপরও মন থেকেই চাইছি, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আবার ঘুরে দাঁড়াক। তা না হলে, ওই সেক্টরে কর্মরত হাজার-হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন। কষ্টে পড়বে ওনাদের পরিবার। এটা ভাবতেও কষ্ট হয়। হৃদয়ে রক্তপাত হয়।

আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দরদী উদ্যোগের কারণে আজ বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্ববাসীর কাছে এক ঈর্ষণীয় এবং অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দয়া করে চলচ্চিত্র এবং বাংলা নাটকের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বার্থে এই সেক্টরগুলোর জন্যে‌ যৎসামান্য সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে আমাদের চলচ্চিত্র এবং নাটক সেক্টর। প্রয়োজনে নামী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাত্র ৫০-৬০ কোটি টাকার অনুদান দিলেই দুই সেক্টরে কর্মরত লাখলাখ মানুষ উপকৃত হবে।

সবাইকে ঈদুল ফিতরের আগাম শুভেচ্ছা। ভালো থাকবেন সবাই। সুস্থ থাকবেন।

Please follow Blitz on Google News Channel

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here