বিনোদন জগত সদস্যদের প্রিয় ঠিকানা ক্রাউন ডিজিট্যাল ল্যাব

0

কেনো ক্রাউন ডিজিট্যাল ল্যাব-এ কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে একজন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা বলেন, “ওখানকার পরিবেশ অন্য যেকোনো ষ্টুডিও’র চাইতে একদম আলাদা – বিজয়া লক্ষ্মী ত্রিপুরা

আজ থেকে বেশ কয়েক যুগ আগে সিনেমার গান রেকর্ডিং এর একমাত্র ঠিকানা ছিলো মগবাজার এলাকায় অবস্থিত শ্রুতি রেকর্ডিং ষ্টুডিও। এটির কর্ণধার ছিলেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমান, যিনি সবার কাছেই ‘খান আতা’ নামে খ্যাত। প্রায় একই সময়ে ঢাকা পরানা পল্টন এলাকায় ছিলো এল্ভিস ষ্টুডিও। এই এল্ভিস ষ্টূডিওতেই শব্দ গ্রাহকের কাজ করতেন এখনকার সঙ্গীত পরিচালক কাজী জামাল। তিনি এরপর আরো বেশকিছু ষ্টুডিওতেও কাজ করার পাশাপাশি সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। সঙ্গীত জগতের সবার কাছে কাজী জামাল এক প্রিয় নাম। গুনী এই মানুষটা একেবারেই নিরহঙ্কারী। সম্প্রতি ঢাকার মালিবাগ এলাকায় নিজের ষ্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেছেন কাজী জামাল। এটির নাম ‘সাউন্ড ডিজাইন’।

ক্রাউন ডিজিট্যাল ল্যাব-এ চিত্র নায়ক শাকিব খান

গত বেশ ক’ছর ধরে হঠাৎ করেই বাংলাদেশে হোম ষ্টুডিও নামের এক কালচার চালু হয়, যেটিকে কেউকেউ ষ্টুডিও’র বিকল্প ভাবতে শুরু করেন। ওই কথিত স্টুডিও গুলোয় আলাদা ভয়েস রুম তো নেইই এমনকি প্রয়োজনীয় সাউন্ড প্রুফের ব্যবস্থাও নেই। অনেকটাই নিজেদের বাসাবাড়ীতে কিছু সঙ্গীত পরিচালক একটা কম্পিউটার, সাউন্ড কার্ড আর মাইক্রোফোন নিয়ে ওগুলোতেই গান তৈরীর কাজ চালাতে থাকেন। এসব হোম ষ্টুডিও’র দাপটে পেশাদার ষ্টুডিওগুলো ক্রমাগত মার খেতে থাকে। এমনকি নতুন করে আর কেউ ষ্ট্যাণ্ডার্ড অডিও কিংবা ডাবিং ষ্টুডিও প্রতিষ্ঠার করা ভাবতেও ভয় পাচ্ছিলেন। এক সময় জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক রিপন খানের ইকিউ ষ্টুডিও সিনেমা এবং অডিও জগতের কাছে ব্যাপক পরিচিতি পায়। কাকরাইল এলাকায় ইকিউ ষ্টুডিওতে তখন রীতিমত ভিড় লেগে থাকতো। আগে থেকে ব্যুকিং না দিলে শিফট পাওয়াই যেতো না। এরপর একিউ কাকরাইল থেকে অন্যত্র চলে যায়। পরবর্তীতে এটি চলে আসে ঢাকা নিকেতন এলাকায়।

ক্রাউন ডিজিট্যাল ল্যাব-এ তাহসান ও জাকিয়া বারি মম

গত বেশ ক’বছর ধরেই ঢাকা নিকেতন এলাকা ক্রমশ মিডিয়া সংশ্লিষ্ট কোম্পানীদের পছন্দের ঠিকানা হয়ে উঠেছে। এরই মাঝে কম করে হলেও দু ডজন মিডিয়া কোম্পানী নিকেতনেই ওদের অফিস সাজিয়েছে। নিকেতন এলাকায় দুটো অডিও ষ্টুডিও’র একটি হলো রিপন খানের ইকিউ আর অন্যটি ‘ক্রাউন ডিজিট্যাল ল্যাব’। এটি দেশের অন্যতম শীর্ষ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ক্রাউন এন্টারটেইনমেন্ট-এর সহযোগী উদ্যোগ।

ক্রাউন ডিজিট্যাল ল্যাব এর সার্বিক দায়িত্বে আছেন সঙ্গীত পরিচালক রানা আকন্দ। খুব অল্প বয়স থেকেই রানা আকন্দ সঙ্গীত জগতের সাথে গাঁটছড়া বাঁধেন। দীর্ঘ অনেক বছর গিটার, কিবোর্ড সহ নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজানোর তালিম নেয়ার পাশাপাশি যত্ন করে শিখেছেন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। এক সময় ‘ফোকাস’ নামের একটা ষ্টুডিও-তেও সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের কাজ করেছেন। সেই সুবাদে চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত জগতের অনেকের কাছেই রানা আকন্দ এক পরিচিত নাম। ২০১৯ সালের শেষদিকে তিনি ক্রাউন পরিবারে যোগ দিয়ে ক্রাউন ডিজিট্যাল ল্যাব প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেন। নিকেতন এলাকায় গড়ে ওঠে এই আধুনিক ডিজিট্যাল ষ্টুডিও যেটি বর্তমানে চলচ্চিত্র, নাটক এবং অডিও জগতের প্রায় সবার কাছে এক প্রিয় নাম।

ক্রাউন ডিজিট্যাল ল্যাব-এ তারিন ও নীরব

কেনো ক্রাউন ডিজিট্যাল ল্যাব-এ কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে একজন খ্যাতিমা চলচ্চিত্র নির্মাতা বলেন, “ওখানকার পরিবেশ অন্য যেকোনো ষ্টুডিও’র চাইতে একদম আলাদা। আমাদের যখন শিফট চলে তখন ষ্টূডিও’স ভেতরে ক্রাউন এর অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউওই ভুল করেও উঁকি দেন না – আমাদের কাজে ডিস্টার্ব করেন না। এটা খুবই লক্ষ্যনীয় এবং প্রশংসনীয় একটা দিক। এই প্রতিষ্ঠানের সবাই মিডিয়ার সাথে বহু বছর থেকে সম্পৃক্তও বলেই মনে হয় যেনো নিজের পরিবারের সাথে আছি”।

তিনি বলেন, “ষ্টুডিওতে কাজ করতে হলে প্রাইভেসী চাই, যা অনেক ষ্টুডিওতেই আজকাল পাওয়া যায়না। কিছু ষ্টূডিও’র মালিকরা তো রীতিমত আমাদের শিফট চলার সময় বাব্রবার উঁকি মেরে কিংবা ষ্টূডিও’র ভেতরেই বসে থেকে কাজে বিঘ্ন ঘটান। এসব ক্রাউন ডিজিট্যাল ল্যাব-এ একেবারেই নেই। একারণেও এই ষ্টূডিও ক্রমশ চলচ্চিত্র, নাটক এবং অডিও সেক্টরের কাছে সেরা পছন্দ হয়ে উঠেছে”।

ক্রাউন ডিজিট্যাল ল্যাব এর ব্যস্ততা সম্পর্কে সঙ্গীত পরিচালক রানা আকন্দ বলেন, সব সময়ই আমাদের ব্যস্ততা আছে। কিন্তু ঈদ, ভ্যালেন্টাইন্স-সহ বিভিন্ন উৎসব কিংবা বিশেষ দিনের আগে আমাদের ব্যস্ততাটা বহুগুনে বেড়ে যায়। ঈদুল ফিতরের কথাই যদি বলি, আমাদের ষ্টুডিওতে চব্বিশ ঘন্টা একটানা কাজ চলেছে। ক্রাউন-এর এডিট প্যানেল সেকশনেও ছিলো একই রকমের ব্যস্ততা। ঈদের পর মাত্র ৪-৫ দিন কাজের চাপ একটু কম থাকলেও এখন আবার ঈদুল আযহার কাজের চাপ শুরু হয়ে গেছে।

ক্রাউন ডিজিট্যাল ল্যাব-এ জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী তপন চৌধুরী

তিনি বলেন, “ক্রাউন এন্টারটেইনমেন্ট এবং ক্রাউন ক্রিয়েশনস এর নিজস্ব নাটকের কাজের পাশাপাশি অন্য প্রযোজনা কোম্পানীগুলোর নাটকের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, টাইটেল সং, ডাবিং ইত্যাদির কাজ তো আছেই, এছাড়াও অডিও গানের রেকর্ডিংয়ের কাজও চলছে সমান তালে। এছাড়া সিনেমার ডাবিং, মিউজিক ইত্যাদির কাজ তো আছেই। ইনশাআল্লাহ কাজের গতি আগামীতে আরো বাড়বে। তখন হয়তো ক্রাউন ডিজিট্যাল ল্যাব এর আরেকটা বা একাধিক ইউনিট শুরু করতে হবে”।

ক্রাউন পরিবারের আদি প্রতিষ্ঠান ক্রাউন মিউজিক, যা ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন কোনও গান প্রকাশিত হয়নি। এ প্রসঙ্গে ক্রাউন এর অপর কর্মকর্তা ফাজবির তাজ বলেন, “ক্রাউন মিউজিক-এর জন্যে বেশ কিছু নতুন গানের অডিও রেকর্ডিং এরই মাঝে সম্পন্ন হয়েছে। কোভিড এবং লক ডাউন ইত্যাদির কারণে নতুন গানগুলোর মিউজিক ভিডিও নির্মাণ বাধাগ্রস্থ হয়েছে। আমরা আশা করছি ঈদুল আযাহার পর আবারও ক্রাউন মিউজিক এর কর্ম ব্যস্ততা শুরু হবে”।

বাংলা গানের বাজারে বর্তমানে যে মন্দা চলছে এবিষয়ে ফাজবির বলেন “ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে। মানুষ গান শুনবেই। মাঝে কিছুটা সময় আজেবাজে গান এসে একদিকে যেমন সঙ্গীতের মারাত্মক ক্ষতি করেছে ঠিক একইভাবে শ্রোতারাও বাংলা গান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এরই মাঝে ওসব আজেবাজে গানের দিন ফুরিয়ে গেছে। এটাই আশার বিষয়”।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here