রিনো দত্ত – একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা

0

সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী

স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। কারণ স্বপ্নটাকে নিয়ে খেলতে – ভাঙ্গতে-গড়তে তার ভীষণ ভালো লাগে।সে-ই ছোট্টবেলা থেকে কেমন করে যেনো স্বপ্ন দেখতে মন চেয়েছিলো। তারপর আর এক পলকের জন্যেও স্বপ্নের আজীবন কারাবাস থেকে এক মুহূর্তের জন্যেও জামিন মেলেনি। দিন নেই – রাত নেই, সারাখন স্বপ্নরা হানা দেয় নানামাত্রিক বায়না নিয়ে। চোখের ইশারায় অনেক কথাই বলে শব্দহীন ভাষায়। ঠিক যেনো শরাবের পেয়ালা হাতে অপ্সরা কোনো তন্বী। ওদের ফিরিয়ে দিতে মন চায়না কিছু্তেই। কারণ স্বপ্নদের ফিরিয়ে দিতে নেই – ভীষণ পাপ হয় তাতে। ধ্যাত কী সমস্ত উদ্ভট ভাবনার নাগর-দোলায় দিনমান উথাল-পাথাল! ভালো তো লাগেনা আর। উঁচু-উঁচু সিড়ি বেয়ে একটা-একটা করে স্বপ্নপূরণ – উফ ভীষণ বিরক্তিকর। এক ঝটকায় সবগুলো সবপ্নপূরণের যাদুর কাঠিটা যদি হাতে কাছে পাওয়া যেতো!

ফের মনে ধাক্কা। সবগুলো স্বপ্ন? এটা আবার কী? আজ অব্দি রিনো দত্ত জানতেই পারেনি স্বপ্নের চৌহদ্দির দৈর্ঘ-প্রস্থ। একসময় বাবা-মা স্বপ্ন দেখাতেন। তারপর … তারপর প্রিয়তমা সেই মানবী যার সাথে সুখদুঃখের শতাব্দী কাটানোর অন্যরকম এক অনুভূতির শুরু হয়ে গেছে অনেকটা বায়োস্কোপের মতোই। বায়োস্কোপ? আবার সবপ্নে হারায় রিনো। চোখের সামনে সারিবেঁধে হাজির হয় সেলুলয়েডের চেহারাগুলো। ওদের কাউকে-কাউকে চিনলেও বাকিরা এখনো অজানা। তবে হাজারো চেহারার ভিড়ে সুচিত্রাকে চিনতে ভুল করেনা সে। হ্যা, সুচিত্রা তার মনের মানুষ। সবাই তাকে সুচিত্রা সেন হিসেবেই চিনলেও রিনো’র কাছে সে কেবলই সুচিত্রা। বারবার এসে চোখ বড়-বড় করে সুচিত্রা সেন বলে যান – এই রিনো সামনে তাকা – তোকে অনুকদূর যেতে হবে। ঠিক আমার স্বপ্নরা যেখানটায় খেলা করে।

রিনো দত্ত আতকে ওঠে। সুচিত্রা সেনের স্বপ্নের সীমান্ত? সেতো ভগবানের আসন ছাড়িয়েও আরো অনুকদূর সামনে। এই বিশাল দূরত্ব কি পার হওয়া চাট্টিখানির কথা? সুচিত্রা হাসেন। সে-ই সিগনেচার হাসি। রিনোর দিকে তাকিয়ে মায়াভরা কন্ঠে তিনি বলেন – তুই পারবি সেখানটায় যেতে – আমি জানি।

রিনোর দু-চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরে। আনন্দের অশ্রু। তখন সেই সুচিত্রার মাঝেই সে খুঁজে পায় স্নেহময়ী এক মা – আদুরীনি বোন – কামনাময়ী সেই মনের মানুষ – আরো কতশত চরিত্রের সমষ্টি।

মাঝে-মাঝে রাতের গহিনে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে রিনো দত্ত আকাশ দেখে নিষ্পলক দৃষ্টিতে। ঠিক অনেকটা রবি ঠাকুরের মতো। তারায়-তারায় খুঁজে বেড়ায় অসংখ্য চরিত্র। কানের কাছাকাছি এসে তখন ফিসফিস করে রবি ঠাকুর কী যেনো বলে যান। খুব খেয়াল করে রিনো বুঝতে চায় সেসব কথা। কখনো-সখনো লালনও আসেন। এরা সবাই রিনো’র অন্যজগতের সঙ্গী। এদের সাথে গভীর ভাবের আদান-প্রদান কারো সাথেই শেয়ার করেনা সে। হয়তো এসব করতে নেই বলেই।

চাঁদটা কখনো অমাবশ্যার আড়ালে বন্দী হলে রিনো তার ভাবনার দূরবীনটা দিয়ে ওই কালোর ভেতরের আলোটা দেখে – ভালো লাগে ওর এসব হেঁয়ালি কাজকর্মে।

আজকাল ওর প্রিয়তমা সর্বাঙ্গীণী দূর থেকে দাঁড়িয়ে রিনোর এসব কান্ডকারখানা দেখে হেসে গড়াগড়ি যায়। রিনোর এসব ছেলেমানূষী ওর ভীষণ ভালো লাগে। জীবনে যদিও সে কখনো ভগবানকে চোখের সামনে দেখেনি, তবু সেই অদেখা ভগবানের কাছে রিনোর জন্যে বায়না ধরে। রিনোর সব স্বপ্ন পূরণের বায়না।

আজ রিনোর জন্মদিন। সকালেই কথা হলো ওর সাথে। প্রশ্ন করলাম – জন্মদিনের সংখাটা কতো। রিনো হেসে দিলো। কারণ সে জানে, আমি সংখ্যা মানিনা। আমার পৃথিবীতে বয়স বাড়েনা। আমারতো বাড়েইনা কখনো। সে-ই কবে থেকেই ১৮ তে আটকে গেছে বয়সটা।

এই মুহূর্তে আমি যদি কলকাতায় থাকতাম কিংবা রিনো ঢাকায়, আজকের বিকেলটা অন্যরকম হতো। হ্যা সত্যিই অন্যরকম। গৎবাঁধা মনটোমাস জীবন আমার একদমই ভালো লাগেনা। আমি জীবনটাকে সাদাকালো হতেই দিইনা। একপ্রস্থ রঙ্গতুলির আয়োজন নিয়ে ক্রমাগত এঁকে যাচ্ছি জীবনের নানা মানে। কেউ একজন আমায় ডাকতেন সব্যসাচী নামে। কেনো সেটা আমিও জানিনা। রিনো আর আমার মাঝে অজস্র মিল। ওঁর গুণের সীমান্ত নেই, আর আমি একেবারেই নির্গুণ। রিনো কাজপাগল, আর আমি বোহেমীয়। রিনো সববিষয়েই সিরিয়াস, আর আমি ঠিক তার উল্টো। তবু ভালো লাগে, এই নির্গুণ অধমটাকে রিনো দত্ত যখন আদর করে দাদা বলে ডাকে। আমার মতো একটা অখ্যাত, অজ্ঞাত, নগণ্য মানুষকেও অবহেলা করেনা সে। এটাই ওঁর বিশালত্ব। একারনেই সে – রিনো দ্য গ্রেট। শুভ জন্মদিন রিনো। তোমার জন্যে আর তোমাকে যারা ভালোবাসে ওদের সবার জন্যে এই দাদা’র পক্ষ থেকে একটা গানের কয়েক লাইন। এর বেশি কিছু দেয়ার যোগ্যতা তো এই মুহূর্তে নেই।

আকাশের জানালা ছুঁয়ে যদি

ভালোবাসা গড়িয়ে পড়ে

পূর্ণিমা চাঁদের আচলজুড়ে

বৃষ্টিরা অঝোরে ঝরে।

জানবে তোমাকে আমি ভুলিনি

যদিও আমাকে তুমি ভালোবাসনি …

সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী ব্লিটজ-এর সম্পাদক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here