কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এখন বিএনপি’র সাজাপ্রাপ্র পলাতক নেতা তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন মামুন এর নিয়ন্ত্রণে। নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, মামুন আর মিয়া নুরুদ্দিন অপু মিলে দণ্ডপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যদের সহায়তায় গোটা কারাগারের পুরো নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিয়েছেন মামুন। প্রতিমাসেই কারা কর্তৃপক্ষকে মোটা অংকের মাসোয়ারা দিয়েই মামুন-অপু রা এসব ম্যানেজ করছেন। জানা গেছে, মামুনদের কাছ থেকে প্রতিমাসে লাখ টাকার বেশী মাসোয়ারা নিচ্ছেন সিনিয়ার সুপার সুভাষ ঘোষ এবং জেলার মাহবুব উল আলম। উল্লেখ্য বিগত ২০১০ সাল থেকেই প্রায় এক টানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার হিসেবে আছেন মাহবুব। তাঁর বিরুদ্ধে বিদেশে কোটিকোটি টাকা পাচারের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় কোটিকোটি টাকার সম্পদ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে।
ব্লিটজ এর অনুসন্ধানে জানা গেছে গিয়াস উদ্দিন মামুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সূর্যমুখী ভবনের দোতলায় থাকেন। তাঁর পাশেই থাকেন বিএনপি সাবেক সংসদ সদস্য কামাল। আর মিয়া নুরুদ্দিন অপ থাকেন বকুল ভবনের তিনতলায়।
কারাগারে মামুন এর মোট ৬ জন সেবক এবং নিজস্ব বাবুর্চির পাশাপাশি ব্যক্তিগত ডিপ ফ্রিজ আছে। প্রতি সপ্তাহেই বস্তা ভরে কাঁচা বাজার এবং কাঁচা গোশত-মাছ যায় তাঁর কাছে। যদিও কারা আইনে বাইরে থেকে এসব নেয়ার কোনই নিয়ম নেই, কিন্তু মামুনের ক্ষেত্রে এসব নিয়ম অচল। কারণ, তিনি নিয়মিতভাবে কারা-প্রশাসনকে ভাতা দিয়ে আসছেন। আর এই কথিত ভিআইপি বন্দীদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন জেলার মাহবুব নিজেই।
কারাগারে মামুন-অপুদের হয়ে কাজ করেন সাজাপ্রাপ্ত বিডিআর সবুজ। তার লকআপ মধুমতি ভবনের তিনতলার ৬ নম্বর কক্ষে।
জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই গিয়াস উদ্দিন মামুন, মিয়া নুরুদ্দিন অপু-রা ভীষণ ফুর্তিতে আছেন। তাঁরা প্রকাশ্যেই বলাবলি করছেন ঈদের পর নাকি দেশে ব্যাপক “আন্দোলনঃ শুরু হবে। তাঁরা এটাও বলছেন, হেফাজতে ইসলাম কিছু জঙ্গী গ্রুপের সহায়তায় দেশে ব্যাপক সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে সরকারকে নাকি ক্ষমতাচ্যুত করবে।
জানা গেছে, এই ঈদে মামুন গং জঙ্গি, হেফাজত এবং অন্যান্য বন্দীদের মাঝে কয়েক শ পাঞ্জাবী ও লুঙ্গী বিতরণ করেছেন। পাশাপাশি এরা হেফাজতে ইসলামের যেসব নেতা এবং কর্মী গ্রেফতার হচ্ছেন তাদের সবার দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন। এক্ষেত্রে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বসেই মামুন নিজে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কাশিমপুর ১, ২ ও ৪ জেলে থাকা হেফাজতে ইসলাম, জেএমবি, হরকতুল জিহাদ ও আনসার আল ইসলাম সদস্যদের খাবার, নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য এবং নগদ টাকা পাঠাচ্ছেন ওইসব জেলে থাকা বিডিআর সদস্যদের সহায়তায়।
আরো জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হককে কাশিমপুর-২ কারাগারে পাঠানোর পর সেখানে তার জন্যে মোবাইল ফোনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন গিয়াস উদ্দিন মামুন। পাশপাশি ওই জেলে হেফাজত, জেএমবি, হরকতুল জিহাদ ও আনসার আল ইসলাম সদস্যদের সার্বিক দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁরই বিশ্বস্ত কিছু বিডিআর সদস্যকে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মাদক ব্যবসা এখন বিডিআরদের নিয়ন্ত্রণে
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রতি মাসেই কোটি টাকার বেশী মাদক বিক্রী হয়। বিশেষ করে ইয়াবা এবং গাঁজা। এতোকাল এসব ব্যবসা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বেশ কিছুকাল থেকেই এসব নিয়ন্ত্রন করছেন সাজাপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যরা। এসব ব্যবসার লাভের অর্ধেক নিয়ে নেন জেলার মাহবুব, আর তিনিই কারাগারে মাদকের ব্যবসার পাশাপাশি অবৈধ মোবাইল ফোনের ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করেন বলে জানা গেছে।