গণতন্ত্র বিরোধী জঙ্গিবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম-এর পঞ্চাশ জনের বেশী নেতার অবৈধ সম্পদের খোঁজ নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দূদক)। অভিযোগ আছে জুনায়েদ বাবুনগরী, মামুনুল হক-সহ হেফাজতের বেশকিছু নেতা কয়েক বছর যাবত পাকিস্তান, কাতার, তুরস্ক, আরব আমিরাতসহ বেশকিছু দেশ থেকে কোটিকোটি টাকা এনে বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের মাধ্যমে এদেশে খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের কিছু নেতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক অবৈধভাবে মুদ্রিত ভারতীয় জালনোটের ব্যবসার সাথেও জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। গ্রেফতারের পর হেফাজত নেতা মামুনুল হক নিজেই স্বীকার করেছেন, তাঁরা বিদেশ থেকে বিপুল পরিমান টাকা পাচ্ছিলেন এবং পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর পরামর্শে বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।
দূদক সুত্রে জানা গেছে এরই মাঝে সংস্থাটির পরিচালক আকতার হোসেন আজাদের নেতৃত্বে হেফাজতের অর্ধশত নেতার সম্পদ অনুসন্ধানে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, নূরুল হুদা, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী, সাইদুজ্জামান ও উপসহকারী পরিচালক শহীদুর রহমান।
আরো জানা গেছে, বাবুনগরী ও মামুনুলসহ হেফাজতের অর্ধশত নেতাদের বিরুদ্ধে সংগঠনের তহবিল, বিভিন্ন মাদ্রাসা, এতিমখানা ও ইসলামী প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা এবং ধর্মীয় কাজের জন্য আসা বিদেশি সহায়তা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। যাচাই-বাছাইয়ে এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।
সূত্র জানায়, বাবুনগরীসহ ৫৪ নেতার ব্যাংক হিসাবের তথ্য সংগ্রহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
দুদক সুত্র বলছে, হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬ কোটি টাকার লেনদেন, মানি লন্ডারিং ও সম্পদের অভিযোগ পেয়েছে দুদক। এই নেতার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক। ইতোমধ্যেই তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমে পড়েছে দুদক।
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব করা অন্য নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, হেফাজতের সাবেক সহসভাপতি মুহাম্মদ মাহফুজুল হক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, মহাসচিব সৈয়দ ফয়জুল করীম, আল-হাইআতুল উলয়াও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ প্রমুখ।
হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হতে নতুন সর্ত
চট্টগ্রামের আলোচিত দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় এ বছর রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকা কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারছে না। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীরা সামাজিকমাধ্যমে কোনো পোস্ট দিলে সেটিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।
চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০২১-২২) নতুন এ নির্দেশনা দিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। গত ১৮ মে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত এক ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে এ দুটি ছাড়া আরও কিছু শর্ত যুক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি মাসের ৩০ মে থেকে সব বিভাগের নতুন ও পুরনো শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। এতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে প্রচলিত রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন এবং আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে কোনোরূপ সম্পৃক্ত থাকা যাবে না।
পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে ও ছাত্রাবাসসহ ক্যাম্পাসে মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো প্রকার স্মার্টফোন পাওয়া গেলে জব্দ করা হবে। তবে সাধারণ মোবাইল ফোন আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত ব্যবহারের সুযোগ থাকবে।
এ ছাড়া শর্তের মধ্যে আরও রয়েছে— মাদ্রাসার ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক অবস্থান করতে হবে। শিক্ষার্থীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো পোস্ট দিতে পারবে না; দিলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।