নানা প্রলোভনে মেয়েদের পাচার করা হচ্ছে বিদেশের পতিতালয়ে

0

নানা প্রলোভনে মেয়েদের পাচার করা হচ্ছে বিদেশের পতিতালয়ে।

ভারতের প্রভাশালী ইংরেজী পত্রিকা দ্যা হিন্দু’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ভারতের বেঙ্গালুরুতে গণধর্ষণের শিকার বাংলাদেশি তরুণীকে পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করা হয়েছিলো। অবশেষে তাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।  কেরালা রাজ্যের কোঝিকোড়িতে গত শুক্রবার শনাক্ত করার পর তাকে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এদিকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওর সূত্র ধরে পরিবারের সদস্যেরা ওই তরুণীকে শনাক্ত করেন।

এরই মধ্যে ভিডিওর সূত্র ধরে গত শুক্রবার বেঙ্গালুরুতে সেখানকার পুলিশ ঘটনার মূল হোতা রিফাতুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়সহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে দুজন নারীও রয়েছেন। গ্রেপ্তার করা ছয়জনের মধ্যে দুই যুবক পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন।

তাকে উদ্ধার করা বেঙ্গালুরু পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এরই মধ্যে ওই তরুণী দুবাই গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হয়েছিল এবং প্রায় এক বছর ধরে তিনি সেখানকার একটি বারে নর্তকীর কাজও করেছিলেন।  কয়েক মাস আগে ওই তরুণী তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় মোহাম্মদ বাবা শেখের কথায় ভারতে ফেরেন।  বাবা শেখ নিজেও একটি পতিতাবৃত্তি চক্রের সদস্য।

নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী ঢাকার মগবাজার এলাকার বাসিন্দা।  সৌদি আরবে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন ওই তরুণী।  দুবছর আগে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার।

এদিকে বাবা শেখ ও তার সহযোগীরা বাংলাদেশ থেকে আসা নারীদের ভারতে বিউটি সেলুন ও গৃহকর্মীর কাজ জুটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেখিয়ে পাচার করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পুলিশ জানায়, আর্থিক কলহ মেটানোর কথা বলে ওই তরুণীকে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে আসা হয়েছিল। তিনি একটি ঘরে ঢুকতেই অভিযুক্তরা সহিংস হয়ে ওঠে।  তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়, যৌন নির্যাতন চালানো হয় এবং ফোনে ভিডিও ধারণ করা হয়।

বেঙ্গালুরু পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ছাড়াও অভিযুক্তদের মোবাইল থেকে আমরা আরও দুটি ভিডিও উদ্ধার করতে পেরেছি। ওই তরুণীকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য ওই ভিডিওগুলো ধারণ করা হয়েছিল। অর্থ না দিলে তারা ওই ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল।’

এমন নির্যাতনের পর ওই তরুণী পুলিশের সাহায্য না নিয়ে তার প্রেমিককে ফোন দিলে, একদিন পর ওই ঘর থেকে তরুণীকে উদ্ধার করেন তার প্রেমিক।  এরপর তারা কোঝিকোড়িতে চলে যান।

বিউটি পার্লারের নামে নারী ধরার ফাঁদ

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রহস্যজনক কিছু বিউটি পার্লারের সন্ধান পেয়েছে ব্লিটজ এর অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা। দেখা গেছে কিছু বিউটি পার্লারে মেয়েদের ট্রেনিং দেয়ার কথা বলে মূলত পাচারকারীদের জন্যে মেয়ে ধরার ফাঁদ হিসেবে কাজ করছে ওই পার্লারগুলো। এসব পার্লারের সাথে সরাসরি জড়িত চিহ্নিত অপরাধী চক্র, যারা পার্লারের আড়ালে বিভিন্ন বয়েসী নারীদের বিদেশে লাখ টাকার চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় পতিতা কিংবা যৌন দাসী হিসেবে পাচার করছে। রাজধানীর সোবহানবাগ এলাকায় এমনি একটি রহস্যজনক পার্লার ও ট্রেনিং সেন্টারের সন্ধান পেয়েছেন ব্লিটজ রিপোর্টাররা।

আরো জানা গেছে, লাখ টাকার চাকরীর ফাঁদে ফেলে প্রথমেই মেয়েদের ভারতে পাচার করে দেয়া হয়। এরপর সেখান থেকে সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্রের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয় দুবাইসহ মধ্য প্রাচ্যের কিছু দেশে। এক্ষেত্রে বেশীরভাগ নারীকেই দেয়া হয় পাকিস্তানী পাসপোর্ট। পাকিস্তানের করাচি শহরে মাত্র তিনদিনের মধ্যে পাসপোর্ট করে দেয়ার কয়েকটি চক্র আছে। এরপর ওই পাসপোর্টের পরিচয় নিয়েই পাচারকারী চক্র নারীদের গৃহ পরিচারিকার মিথ্যে কাগজপত্র দেখিতে ভিসা সংগ্রহ করে। আবার ভারতে মুম্বাই থেকেও সমুদ্র পথে পাচার করে দেয়া হয় অনেক নারীকে দুবাইতে। সেখানে এদের ঠাই হয় মূলত গোপন পতিতালয় কিংবা নাইট ক্লাবে।

জানা গেছে দুবাই সিটিতে বেশকিছু নাইটক্লাব এবং এসকোর্ট সার্ভিস পরিচালনা করেন ভারতীয় এবং ইরানী নাগরিকরা। এসব কথিত এসকোর্ট সার্ভিস আদতে হোটেল ও গেষ্ট হাউজে নারী সরবরাহের নেটওয়ার্ক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here