শেখ হাসিনা বিরাট অন্যায় করেছেন!

0

ফেইসবুকে উঁকি দিলেই একের-পর-এক স্ট্যাটাস চোখে পড়ছে। সরকারের সমালোচনা করে ফেইসবুকারদের একটা অংশ বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ওনাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। ওনারা চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন। কেউকেউ বলছেন, বাংলাদেশ অচিরেই শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের মতো দেউলিয়া হতে চলেছে। ক্ষমতাসীন দলের পতনের ঘন্টা বেজে উঠেছে ইত্যাদি। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা ওদের এক রিপোর্টে দাবী করেছে, সম্প্রতি বিএনপির জনসভায় এতো বিশাল জমায়েত হয়েছে যার ফলে ঢাকা শহর সেদিন স্তব্ধ হয়ে গেছিলো, সবকিছু সেদিন থেমে গেছিলো ইত্যাদি। আর বিদেশে বসে তাসনিম খলিল, জুলকারনাইন শায়ের সামিসহ কয়েকজন পণ্ডিত প্রতিদিন ফেইসবুক আর ইউটিউব গরম করছেন নানা জাতের বক্তব্য দিয়ে। ওদেরও প্রত্যাশা, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের মতো দেউলিয়া হয়ে যাক, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পতন ঘটুক। ওরা একথাও বলছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নাকি আমেরিকা এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের তত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হবে।

অন্যদিকে বিএনপি-জামাত আমেরিকা ও ব্রিটেনে বছরে প্রায় পঞ্চাশ লাখ ডলার খরচ করে লবীইস্ট পুষছে, শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকার তথা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গীবৎ চালিয়ে যেতে। একইভাবে, বিএনপির টাকায় ওয়াশিংটনে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা অপকর্ম চালাচ্ছে মুশফিক ফজল আনসারী নামের এক সাংবাদিক। বিএনপির শাসনামলে হওয়া ভবনের লোক হিসেবে পরিচিত এই মুশফিক ছিলো হারিস চৌধুরীর সহকারী। আমেরিকায় সে একটা এনজিও খুলেছে, যেটায় চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক এবং বাংলাদেশে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলামকে। প্রায় প্রতিদিন এরা ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল এলাকায় সিনেট, কংগ্রেসসহ বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিচ্ছেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তৈরী করা ডশিয়ার বা প্রচারপত্র নিয়ে। প্রতি মাসে এরা নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ দপ্তরেও যাচ্ছেন একই মিশন নিয়ে। ওনারা চাচ্ছেন জাতি সংঘ এবং মার্কিন ট্রেজারী ডিপার্টমেন্ট যাতে চলতি বছরেই বাংলাদেশের বেশকিছু সংখ্যক রাজনীতিবিদ এবং সিভিল-মিলিটারি আমলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

মুশফিক ফজল আনসারী হোয়াইট হাউজ এবং জাতিসংঘের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড নিয়েছে নিজেকে ঢাকার জাষ্ট নিউজ এবং অন্য একটা জাতীয় দৈনিকের সংবাদদাতা ও ব্যুরো প্রধান পরিচয় দিয়ে। এখন ওই প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ব্যবহার করেই সে ওয়াশিংটন এবং নিউ ইয়র্কে ঘুরঘুর করছে বিএনপির মিশন নিয়ে। একইভাবে মুশফিক ও মাইলাম প্রায় প্রতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্টের বিভিন্ন শহরের রেষ্টুরেন্ট ও পানশালায় কিছু মার্কিন রাজনীতিবিদ, সরকারী অফিসার এবং সাংবাদিকের সাথে আড্ডা দিচ্ছে, ওদের আপ্যায়ন করছে। ওদের টার্গেট একটাই – আসন্ন জাতীয় নির্বাচন যেনো আমেরিকার তত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়। এদের এই অপতৎপরতার বিষয় ওয়াশিংটন এবং নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত কর্তাব্যক্তিদের অজানা নয়। কিন্তু ওনারা এসবের বিপরীতে কিছু করছেন কিনা আমার জানা নেই।

নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সম্পাদকদের একজন ব্রেট স্টিফেনস আমার দীর্ঘ দুই যুগের বন্ধু। তাঁর কাছে শুনলাম বিএনপি-জামাতের লোকেরা নাকি বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে এখানে-ওখানে গিয়ে নালিশ করছে, সরকার “অন্যায়ভাবে” এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আটকে রেখেছে, তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছেনা, ইত্যাদি। কিন্তু এসব দাবী হালে পানি পায়নি। কারণ, মার্কিনিরা যখনই জানতে চেয়েছে কি কারণে খালেদা জিয়া বন্দী, তখন ওদেরকে বলা হয়েছে “দুর্নীতির মিথ্যে মামলায়”। মার্কিন প্রশাসনের কেউকেউ, এমনকি কয়েকজন সিনেটর ও কংগ্রেসম্যান এসব বিষয়ে ঢাকায় খোঁজখবর নিয়েছেন। এরপর তাঁরা যখন জানতে পারলেন বিএনপি নেত্রী অনাথ আশ্রমের অর্থ তছরুপের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, তখনই ওনারা বুঝেছেন, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে “অন্যায়ভাবে” আটকে রাখার দাবী মিথ্যে।

একজন মার্কিন কংগ্রেসম্যান আমাকে বললেন, তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগ সরকার কেনো রাজি নয়। আমি তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেছি, পৃথিবীর আর কোনো দেশে কি এমন পদ্ধতি আছে? তারপর তাঁকে বুঝিয়ে বললাম, ১৯৯০ সালে সামরিক শাসক হোসেন মুহাম্মদ এরশাদের পতন হলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটা নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ অব্দি দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যেই মূলত তত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির সিদ্ধান্ত হয়। কারণ, এটা না করা গেলে দেশ সরকারশুন্য হয়ে পড়তো। এরপর তিনিই জানতে চাইলেন, ১৯৯৬ সাল, যখন দেশে নির্বাচিত আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় তখনও কেনো তত্বাবধায়ক সরকারের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। একইভাবে ২০০১ সালেও কেনো এটা হলো। আমি তাঁকে বলেছি, দেশ যেহেতু ১৯৭৫ সাল থেকে একটানা পনেরো বছর অবৈধ সামরিক জান্তাদের শাসনে ছিলো তাই সব দল মিলেই ১৯৯১ পরবর্তী সময়ে সংসদে তত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি অনুমোদন করে। এটা বাতিল না হওয়া অব্দি জাতীয় নির্বাচন তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিলো, যেটা এখন আর নেই।

আমি ওই কংগ্রেস সদস্যকে এটাও বলেছি, বিশ্বের কোথাও, এমনকি উগান্ডা কিংবা পাকিস্তানেও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ক্ষমতাসীন দলের অধীনে। পাকিস্তানের মতো একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রেও কেউ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তোলেননি। আসলে গণতান্ত্রিক কোনো দেশেই এটা হয়না।

বিএনপি-জামাত চাইছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে অনুষ্ঠিত হোক। পৃথিবীর আর কোনো দেশ আমেরিকা কিংবা বিদেশী কোনো রাষ্ট্রের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলেছে, এমনটা শুনিনি কখনও।

জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসছে। এটা সরকারী কিংবা বিরোধী দল উপলব্ধি করুক বা না করুক। সঠিক সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই। কিন্তু আগামী নির্বাচন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যখন গোটা বিশ্ব কোভিড পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং ইউক্রেইন যুদ্ধের তাণ্ডবে নানা মাত্রিক সমস্যার মুখোমুখি। কেউ জানেনা উইক্রেইন যুদ্ধ কবে শেষ হবে। যদিও এরই মাঝে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোয় এই যুদ্ধের কারণে চরম আর্থিক মন্দার পাশাপাশি জ্বালানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে। খোদ আমেরিকায় দরিদ্র বাড়ছে, বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান তো রীতিমতো লন্ডভন্ড অবস্থায় পড়েছে। এমন এক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে ভালোই আছে বলতে হবে। কোভিড সংকটের সময় বিশ্বের অনেক ধনী দেশও যখন ভ্যাকসিন নিয়ে দুর্ভোগে, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চৌকষ সিদ্ধান্ত আর উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশে ভ্যাকসিনের অভাব হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এলো, তখন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় তলানিতে। বিএনপি-জামাত সরকারের অবাধ লুটপাটের ফলে বিদ্যুৎ সেক্টর প্রায় বিধ্বস্ত। প্রতিদিন ঢাকা শহরেই গড়ে ৭-৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হতো। দুর্নীতিতে হ্যাট্রিক করেছে বাংলাদেশ। জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। এসব চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে একটা বিপর্যস্ত দেশকে মাত্র ১৪ বছরে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। আজ বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ হলো অর্থনৈতিক উন্নয়নের জ্বলজ্বলে তারকা।

জঙ্গিবাদের শিকড় উপড়ে ফেলেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থার ব্যাপক ও কার্যকর ভূমিকা কথা স্বীকার করতেই হবে।

বাংলাদেশকে উন্নয়নের যে ধারায় পৌঁছে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্যে জাতি হিসেবে তাঁর কাছে আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। কারণ দেশের জন্যে এতোকিছু করে তিনি নিশ্চয়ই ভুল করেননি।

সালাহ্ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী সিনিয়ার সাংবাদিক ও ব্লিটজ-এর সম্পাদক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here